সামাজিক ব্যবসায় হলো এমন এক ধরনের ব্যবসায় যেখানে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ মূলধন বিনিয়োগ করেন কোনো লাভের আশা ছাড়াই বরং তাদের মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট কোনো সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা।
অর্থাৎ যে ব্যবসায় গঠন করতে উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী মূলধন সরবরাহ করেন কিন্তু তার প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয় বরং সমাজের কল্যাণ সাধন করা তাকে সামাজিক ব্যবসায় বলে।
সামাজিক ব্যবসায়ের বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পান। এবং, বিনিয়োগের টাকার বাইরের লভ্যাংশ কোম্পানির সম্প্রসারণ এবং উন্নতির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নোবেল বিজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস সামাজিক ব্যবসায়ের মডেলটি উদ্ভাবন করেন। তিনি সামাজিক ব্যবসায় এবং ক্ষুদ্রঋণ উভয়ের জনক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। প্রফেসর ইউনূস বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (১৯৯৪) এবং সিডনি শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮) পান। ২০০৬ সালে, অধ্যাপক ইউনূস সিউল শান্তি পুরস্কার এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ১২ আগস্ট, ২০০৯ সালে প্রফেসর ইউনসকে হোয়াইট হাউসের একটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করা হয়।
সামাজিক ব্যবসায়ের ৭টি মূলনীতি হলো:
- ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হবে দারিদ্র্য বিমোচনসহ এক বা একাধিক সমস্যা যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং পরিবেশগত খাতে বিরাজমান সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগত মুনাফাহীন কল্যাণকর ব্যবসা এটি।
- সকলের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করাই এ ব্যবসার লক্ষ্য।
- বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবেন। বিনিয়োগকৃত টাকার বাইরের অংশ লভ্যাংশ আকারে দেওয়া হবে না।
- বিনিয়োগকৃত মূলধন ফেরত দেওয়ার পর। কোম্পানির অবশিষ্ট লভ্যাংশ কোম্পানির সম্প্রসারণ ও উন্নতির কাজে ব্যবহৃত হবে।
- সামাজিক ব্যবসায়টি হবে পরিবেশবান্ধব।
- শ্রমিকরা ভালো কর্ম পরিবেশের পাশাপাশি চলমান বাজার অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন।
- সামাজিক ব্যবসায়টি আনন্দের সহিত করা হয়।
সামাজিক ব্যবসা ও প্রচলিত ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য কী?
প্রচলিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন করা। অন্যদিকে সামাজিক ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো জন কল্যাণ করা। সামাজিক ব্যবসায়ের লভ্যাংশ থেকে তার উদ্যোক্তাদের কোনো অংশ প্রদান করা হয় না। কিন্তু প্রচলিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা ব্যবসায়েরে লভ্যাংশের অংশ পেয়ে থাকে।
সামাজিক ব্যবসায় দারিদ্র বিমোচনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এই ব্যবসায়টি বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ব্যবসায়টি জনপ্রিয়তার কারণ হলো এই ব্যবসায়ের মডেলটির জন্য যেখানে উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী একটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাক্তিগত লাভের আশা ছাড়াই বিনিয়োগ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। ব্যবসায়ের বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্যোক্তাদের ফেরত দেওয়ার পর বাকি অর্থ ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন:
ব্যবসায় কেন গুরুত্বপূর্ণ জেনে নিন?
একমালিকানা ব্যবসায় বলতে কি বুঝায় ব্যাখ্যা কর?
Leave a Reply