একমালিকানা ব্যবসায় কি একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি

একমালিকানা ব্যবসায় কি? একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

যে ব্যবসায় একক মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে। অর্থাৎ একমালিকানা ব্যবসায়ে একজন মাত্র মালিক থাকে এবং সে নিজে ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

একমালিকানা ব্যবসায় এত জনপ্রিয় কেন?

একমালিকানা ব্যবসায় সবচেয়ে প্রচীনতম ব্যবসায় সংগঠন। এ ব্যবসায়টি খুব সহজেই গঠন করা যায়। যে কেউ ইচ্ছা করলে এ ব্যবসায় গঠন করে সে তার কর্মসংস্থান করতে পারে। স্বল্প পুঁজি বা মূলধন নিয়ে যে কেউ একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করতে পারে। একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক স্বাধীনভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে। একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক একজন থাকায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়। তাছাড়া, এক মালিকানা ব্যবসায়ে লাভ-লোকসান যেটিই হোক মালিক তা একা ভোগ করেন।

একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কি কি?

  1. একক মালিকানা
  2. সহজ গঠন
  3. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন
  4. স্বল্প পুঁজি বা মূলধন
  5. প্রত্যক্ষ সম্পর্ক
  6. সীমিত আয়তন
  7. একক ঝুঁকি
  8. অসীম দায়
  9. নমনীয়তা
  10. অনিশ্চিত স্থায়িত্ব
  11. পৃথক সত্তাহীন
  12. সরকারি বাধা-নিষেধ মুক্ত

একমালিকানা ব্যবসায়ের সুবিধা কি কি?

  1. এই ব্যবসায় গঠন ও বিলোপসাধন খুব সহজ।
  2. স্বল্প মূলধন বা পুঁজি নিয়ে শুরু করা যায়।
  3. মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ ভোগ কারার সুবিধা।
  4. স্বাধীনভাবে ব্যবসায় পরিচিলনা করা যায়।
  5. ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করার সুযোগ।
  6. গোপনীয়তা রক্ষা করার সুযোগ।
  7. সরকারী আইন থেকে মুক্তি।
  8. অবস্থানগত সুবিধা
  9. ক্ষেত্রগত সুবিধা
  10. সহজ পরিচালনা
  11. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
একমালিকানা ব্যবসায়ের অসুবিধা কি কি?
  1. সীমিত মূলধন
  2. সীমাহীন দায়বদ্ধতা
  3. সীমাবদ্ধ পরিচালন ক্ষমতা
  4. বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতি
  5. সীমিত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা
  6. পরিচালনায় অভিজ্ঞতার অভাব
  7. সমস্ত কিছু মালিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রসমূহ কি কি?

  1. স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়
  2. সীমিত চাহিদার ব্যবসায়
  3. স্বল্প ঝুঁকির ব্যবসায়
  4. খুচরা পণ্য
  5. ভ্রাম্যমান ব্যবসায়
  6. স্বাধীন মনোভাব
  7. কৃষি পণ্যের ব্যবসায়
  8. সেবামূলক ব্যবসায়
  9. পচনশীল পণ্যের ব্যবসায়
  10. পরিবর্তনমীল চাহিদার পণ্যের ব্যবসায়

একমালিকানা ব্যবসায়ের ৫টি উপযুক্ত ক্ষেত্রসমূহ এর নাম:

  1. ওষুধের দোকান
  2. লণ্ড্রি
  3. সেলুন
  4. খাবারের দোকান
  5. মুদি দোকান

বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় টিকে থাকার কারণ কি কি?

১. সহজ গঠন: একমালিকানার ব্যবসায় গঠন করা অত্যন্ত সহজ প্রকৃতির। কোনো ধরনের আইনগত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পরে না। যে কেউ চাইলেই এই ব্যবসায় গঠন করতে পারে।

২. স্বল্প পুঁজি বা মূলধন: নিজ অর্থ বা আত্বীয় স্বজন থেকে ধার নিয়ে খুব সহজেই একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করা যায়। যেমন: চায়ের দোকান, মুদি দোকান ইত্যাদি ব্যবসায় গঠন করতে খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। 

৩. কম ঝুঁকির ব্যবসায়: একমালিকান ব্যবসায়ে ঝুঁকি কম থাকায় বেশিরভাগ মানুষ এ ব্যবসায় গঠনে আগ্রহী হন। অন্যান্য ব্যবসায়ের তুলনায় এই ব্যবসায়ে ঝুঁকির পরিমাণ খুব কম হয়ে থাকে।

৪. স্বাধীনতা: এক মালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মালিক সম্পূর্ণ স্বধীনতা পেয়ে থাকেন, তিনি ব্যবসায়ের সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং কারো কাছে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৫. অবস্থানগত সুবিধা: এক মালিকানা ব্যবসায় যেকোনো জায়গায় গঠন করা যায়। কিন্তু বৃহদায়তন ব্যবসায় যেকোনো স্থানে গঠন করা যায়। ভোক্তাদের খুব কাছাকাছি স্থানে এক মালিকানা ব্যবসায় গঠন করা হয়ে থাকে। 

৬. ক্ষেত্রগত সুবধা: একমালিকানা ব্যবসায়ের অনেক ধরনের ক্ষেত্র রয়েছে, যেমন: স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়, সীমিত চাহিদার ব্যবসায়, স্বল্প ঝুঁকির ব্যবসায়, খুচরা পণ্য, ভ্রাম্যমান ব্যবসায় ইত্যাদি। যে কেউ ইচ্ছা করলে যেকোনো একটি ক্ষেত্র নিয়ে স্বল্প পরিসরে এক মালিকানা ব্যবসায় গঠন করতে পারে। 

৭. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ:

এক মালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে শুধু একজন মালিক থাকায় তিনি নিজেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যার ফলে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

মানুষ যখন থেকে ব্যবসায়ের ধারণা আয়ত্ত শুরু করে তখন থেকেই এক মালিকানা ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বে একমালিকানা ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা সবার শীর্ষে। বিশ্বের প্রায় ৮০% ব্যবসায় একক মালিকানার ভিত্তিতে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কারণ, একমালিকানা ব্যবসায়ে একজন মালিক হওয়ায় যে কোনো ব্যবসায়ের তুলনায় এ ব্যবসায় থেকে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করা যায়। তাছাড়া, একমালিকানা ব্যবসায়ে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্য কারও ওপর নির্ভর করতে হয় না। মালিক স্বাধীনভাবে তার ব্যবসায়ের সকল সিদ্ধান্ত একা নেন এবং কারও কাছে জবাবদিহি করার প্রয়োজন পড়ে না।

এক মালিকানা ব্যবসায়ের মালিক নিজে একাই ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তাই মালিক তার নিজস্ব গুণাবলি, দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়কে পরিচালনা করে। এক মালিকানা ব্যবসায়ের সমস্ত লাভ মালিক একা ভোগ করে এবং লোকসান হলে সম্পূর্ণটা মালিককেই ভোগ করতে হয়।

Comments

One response to “একমালিকানা ব্যবসায় কি? একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link