বৈদেশিক বাণিজ্য বলতে বুঝায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য ও সেবা বিনিময় করা। অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্য কোনও দেশের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে বরং দুটি দেশের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিনিময় করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বাহ্যিক বাণিজ্য বা আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যও বলা হয়।
বৈদেশিক বাণিজ্য ৩ প্রকার:
- আমদানি
- রপ্তানি
- পুনঃরপ্তানি
১. আমদানি:
আমদানি বলতে বুঝায় অন্য দেশ থেকে বা বিদেশী দেশ থেকে স্বদেশে পণ্য বা সেবা ক্রয় করা। একটি দেশ এমন পণ্য বা সেবা সমূহ আমদানি করে থাকে যেগুলি তাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। তাছাড়া সস্তা মূল্য ও বাজার সুবিধার কারণেও আমদানি হয়ে থাকে। যেমন: বাংলাদেশের পোশাক তৈরি খরচ সস্তা হওয়ায় বিভিন্ন দেশ আমাদের দেশ থেকে পোশাক আমদানি করছে, আবার বাংলাদেশের মধ্যে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি উৎপদিত না হওয়ায় বিভিন্ন দেশ হতে যন্ত্রপাতি আমদানি করছে।
যদি কোনও দেশের আমদানির ব্যয় তার রফতানির মূল্যের চেয়ে বেশি হয় তবে ঐ দেশে বাণিজ্যের একটি ঋণাত্মক ভারসাম্য দেখা দেয় যাকে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি হিসাবে জানি। সুতরাং, যদি কোনো দেশ তার রপ্তানির চেয়ে বেশি আমদানি করে তাহলে সে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়, আর যদি রপ্তানির চেয়ে কম আমদানি করে তাহলে সে দেশে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত তৈরি করে।
২. রপ্তানি:
এক দেশের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা অন্য দেশের ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করাকে রপ্তানি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: হাবিব গার্মেন্টস এর তৈরি পোশাক আমেরিকায় বিক্রয় করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানি একটি অন্যতম উপাদান। যে দেশ যত বেশি রপ্তানি করে সে দেশ তত বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত করে।
আমরা জানি, আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই একটি দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। যদি আমদানি রপ্তানি থেকে বেশি হয় তাখন বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয় আবার যদি রপ্তানি আমদানি থেকে বেশি হয় তখন বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলা হয়। তাই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে আমদানি ও রপ্তানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা অনুসারে ২০১৭ সালে বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশসমূহ হলো: চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান এবং নেদারল্যান্ডস। রপ্তানি একটি দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যে দেশ যত বেশি রপ্তানি করতে সক্ষম হবে সে দেশ তত বেশি উন্নত হবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধ পাবে।
৩. পুনঃরপ্তানি:
এক দেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে তা পুনরায় আবার অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করাকে পুনঃরপ্তানি বলা হয়। যেমন: বাংলাদেশের কোনো সংস্থা কানাডা থেকে পশম আমদানি করে তা আবার অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানি করে তাহলে তখন এটিকে পুনঃরপ্তানি বলা হবে। আরো সহজ ভাষায়; বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে এবং ঐ আমদানিকৃত পণ্য অন্য দেশের ক্রেতাদের কাছে পুনরায় রফতানি করা হয়, তখন এটিকে পুনঃ রফতানি বলা হয়। পুনঃরপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম আমদানিকারক দেশ মধ্যস্ততাকারী হিসাবে কাজ করে।
Related Article: পুনঃরপ্তানি বলতে কি বুঝায়? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও?
বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্ব:
- বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার সক্ষম করে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দেশগুলিকে তাদের অর্থনীতির বিশেষায়িত করার সুযোগ দেয়।
- বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাহকরা পণ্য বা সেবা গ্রহণের সুযোগ পায়। তাছাড়া এটি মানুষের জীবনের মান উন্নত করে।
- যে দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে তারা অন্যান্য দেশে পণ্য বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- বৈদেশিক বাণিজ্য বিশ্ব বাজারকে প্রশস্ত করে। যার ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে স্বল্প ব্যয়ে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় করা যায়।
- বৈদেশিক বাণিজ্য বিশ্ব বাজারকে প্রশস্ত করে। যার ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়া যায়।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাধারণত উন্নত দেশগুলি থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের দিকে পরিচালিত করে।
Leave a Reply