বিজ্ঞাপন কি

বিজ্ঞাপন কি বা বিজ্ঞাপন কাকে বলে? বিজ্ঞাপন কত প্রকার ও কি কি?

বিজ্ঞাপন কি?

বিজ্ঞাপন হলো একটি প্রচারমূলক কার্যকলাপ বা বিপণন কৌশল যা কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কাজ করে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন হলো কোনো পণ্য বা পরিষেবার প্রচার বা বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে গ্রাহককে আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিপণন কৌশল।

বর্তমানে আমরা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা অন্যান্য কোনো নির্দিষ্ট মিডিয়ার মধ্যে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন বা এডভার্টাইসমেন্ট দেখে থাকি। এই বিজ্ঞাপনগুলি বার্তাপ্রেরণ হিসাবে কাজ করে এবং মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। আবার কখনও কখনও বিজ্ঞাপন একটি নির্দিষ্ট পণ্য উল্লেখ না করে বরং তারা কেবল ক্রেতা এবং ব্র্যান্ডের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সমূহ বর্তমান সময়ে তাদের বিজ্ঞাপনে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে। কোম্পানীর ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি , পণ্য ও সেবার বিক্রি বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞাপনের বিকল্প নেই। এডভার্টাইসমেন্ট বা বিজ্ঞাপন গ্রাহকদের বাজারে উপলব্ধ ব্র্যান্ড এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে অবহিত করতে সহায়তা করে। তাছাড়া বিজ্ঞাপন শিশু, তরুণ এবং বৃদ্ধ সহ সকলের জন্য করা হয়।

বিজ্ঞাপন বলতে কি বুঝায়?

বিজ্ঞাপন হল একটি বিপণন কৌশল যা ভোক্তাদের একটি কোম্পানির পণ্য কিনতে রাজি করানোর জন্য ডিজাইন করা হয়। একটি বিজ্ঞাপন গ্রহকের মনোযোগ আকর্ষণ করে, আগ্রহ তৈরি করে, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে এবং ক্রয় করার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে থাকে।

ব্যবসায়ের আয় এবং মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন মাধ্যম যেমন: প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট সহ প্রথাগত মিডিয়া চ্যানেলগুলির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য কি?

বিজ্ঞাপনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কোনো পণ্য, সেবা ও ব্র্যান্ড বা অফার সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, পণ্য বা সেবা সমূহকে ক্রয় করতে প্ররোচিত করা এবং ঐ ব্র্যান্ড বার বার মনে করিয়ে বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করা।

১. অবহিত করা:

যখন একটি কোম্পানি নতুন পণ্য বা সেবা চালু করে তখন এই পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জনগণকে জানানোর প্রয়োজন পড়ে। বিজ্ঞাপন এর কৌশল ব্যবহার করে একসাথে বহুল জনগোষ্ঠির নিকট খুব তাড়াতাড় পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অবহিত করা যায়। আর সম্ভাব্য গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অবহিত করা যেকোনো ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ।

২. প্ররোচিত করা:

বিজ্ঞাপন এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যা গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলে। একটি বিজ্ঞপনে এমন পণ্যের প্রচার করা যা মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং তাদের এটি কিনতে প্রভাবিত করতে পারে। আপনাকে প্ররোচিত করার জন্য কোম্পানী সমূহ বিজ্ঞাপনে যা ব্যবহার করে: ইমেজ ব্যবহার করে, আজই কিনুন!, ডিস্কাউন্ট দেয় এবং মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য একটি পুরস্কার জেতার সুযোগ ব্যবহার করে।

৩. পুনরাবৃত্তি বা মনে করিয়ে দেওয়া:

আপনি যখন একটি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন বার বার দেখবেন তখন ধীরে ধীরে ঐ ব্র্যান্ডের প্রতি আপনার আগ্রহ ও বিশ্বস্ততা বাড়বে। এটি বিজ্ঞাপনের আরেকটি উদ্দেশ্য যা ব্র্যান্ডকে শক্তিশালী ও ব্র্যান্ডের প্রতি ভালো দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে সম্ভাব্য গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে পারে।

বিজ্ঞাপন কত প্রকার ও কি কি বা বিজ্ঞাপনের প্রকারভেদ?

বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপনের বিকল্পগুলি রয়েছে। নিম্নে জনপ্রিয় কিছু বিজ্ঞাপনের প্রকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

১. Online advertisement

বর্তমান সময়ে মানুষ বেশিরভাগ সময়ই অনলাইনে থাকে। তাই অনলাইন বিজ্ঞাপন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনি ফেসবুকে স্ক্রল করলেই দেখতে পাবেন বিভিন্ন বিজ্ঞান।

অনলাইন বিজ্ঞাপনের জনপ্রিয় মাধ্যম সমূহ:

  1. ফেসবুক বিজ্ঞাপন
  2. গুগল বিজ্ঞাপন
  3. ইনস্টাগ্রাম বিজ্ঞাপন
  4. টুইটার বিজ্ঞাপন
  5. ইউটিউব বিজ্ঞাপন
  6. লিঙ্কডইন বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।

২. Traditional Advertising:

প্রথাগত বিজ্ঞাপন যা প্রচুর গ্রাহকদের কাছে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে ব্যবহৃত গণমাধ্যমকে বোঝায়। অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক প্রচারের জন্য Traditional Advertising খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কয়েকটি Traditional Advertising এর উদাহরণ:

  1. প্রিন্ট বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট বিজ্ঞাপন (ফ্লায়ার, পোস্টার, সংবাদপত্র ইত্যাদি)
  2. বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন
  3. টেলিভিশন বিজ্ঞাপন
  4. রেডিও বিজ্ঞাপন

৩. E-mail Advertising / Marketing:

বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয় একটি সরাসরি মার্কেটিং চ্যানেল। ইমেইল মার্কেটিং প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথমে কোম্পানী নিউজলেটার ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকের ইমেইল সংগ্রহ করে। তারপর ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহকদেরকে সরাসরি ইমেইল করা হয়। বর্তমান সময়ে ইমেইল মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপন মাধ্যম।

৪. SMS Advertising:

এসএমএস বিজ্ঞাপন হল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার প্রচার। পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে ১৬০ বা তার কম অক্ষরের টেক্সট মেসেজ দিয়ে গ্রহককে অবহিত করা হয়। ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে এবং গ্রাহকদের সাথে আস্থা তৈরি করতে কোম্পানিগুলি বাল্ক এসএমএস পরিষেবার সাহায্যে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে সংক্ষিপ্ত তথ্য পাঠায়।

টেক্সট মেসেজিং গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের একটি খুব কার্যকর এবং সরাসরি মাধ্যম। এসএমএস মার্কেটিং উচ্চ সাফল্যের হার সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে খুব সহায়ক করে তোলে।

Types of Advertising Campaigns:
  1. Promotional Campaigns
  2. Engagement Campaigns
  3. Retention Campaigns

Different Types of Google Ads:

  1. Display ads
  2. In-feed ads
  3. In-article ads
  4. Matched Content ads
  5. Search Engine ads

বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

বিজ্ঞাপন একটি নতুন পণ্য বা পরিষেবা চালু করা থেকে শুরু করে আপনার ব্র্যান্ডকে বিশ্বের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার পর্যন্ত কাজ করে। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের প্রচারগুলি আপনাকে আরও সঠিক লোকেদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার ব্যবসার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য আপনার এক্সপোজার বাড়ায়। নিম্নে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখে নিন:

  1. পণ্য বা সেবার পরিচিতি।
  2. পণ্য বা সেবার চাহিদা তৈরি করা।
  3. বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  4. নিউ মার্কেটে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।
  5. নির্দিষ্ট গ্রাহকদের নিকট পণ্য বিক্রি।
  6. বিজ্ঞাপন গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে।
  7. নতুন গ্রাহকদের তৈরি করতে সাহায়তা করে।
  8. বিজ্ঞাপন বিদ্যমান গ্রাহকদের ধরে রাখা সাহায্য করে।
  9. ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করে।
  10. একটি ব্র্যান্ডের খ্যাতি বা ভ্যালু বৃদ্ধি করতে।
  11. বিজ্ঞাপন অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।
  12. ব্যবসার লক্ষ্য পূরণ বড় অবদান রাখে। 

গ্রাহকদের জন্য বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব:

  1. পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়।
  2. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সময় বাঁচায়।
  3. পণ্যের উন্নত গুণমান পাওয়ার সুবিধা।
  4. বেশি প্রতিযোগিতার ফলে মূল্য হ্রাস হয়।
  5. যুক্তিসঙ্গত মূল্যে উন্নত মানের পণ্য পাওয়া যায়।

সমাজের জন্য বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব:

  1. কর্মসংস্থান তৈরি করে।
  2. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে।
  3. বিজ্ঞাপন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  4. বিজ্ঞাপনের ক্রিয়াকলাপ যা অর্থনীতিতে এর কার্যকারিতা বাড়ায়।
  5. প্রতিযোগিতা এবং তথ্যের প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৃদ্ধিকে সহজতর করে।
  6. বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে যে কোনো বাজার ভিত্তিক অর্থনীতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৃদ্ধির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
  7. শিশু শ্রম, মদ সেবন, কন্যা ভ্রূণহত্যা, ধূমপান, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা নিয়ে বিজ্ঞাপন এবং সামাজিক কল্যাণ প্রচার করে।

আরো পড়ুন:

সামাজিক ব্যবসায় বলতে কি বুঝায় ব্যাখ্যা কর?

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন মানে কি বুঝিয়ে লিখ?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link