পদ কাকে বলে

পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার ও কী কী? পদ এর উদাহরণ দাও?

পদ কাকে বলে?

ব্যাকরণের ভাষায় বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। যেমন: ওমর স্কুলে যায়। এই বাক্যে তিনটি শব্দ রয়েছে যথা: “ওমর”, “স্কুলে”, “যায়” প্রত্যেকটি এক একটি পদ।

সুতরাং, বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলা হয়। যখন শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করা হয় তখন সেই শব্দ বা ধাতুকে পদ বলা হয়। যেমন: ’ছেলেরা স্কুলে পড়ে’ এই বাক্যে ‘ছেলে’ শব্দটির সাথে “রা”, ‘স্কুল’ শব্দটির সাথে “এ”, এবং ‘পড়’ ধাতুর সাথে ”এ” যুক্ত হয়ে বাক্যটিকে অর্থপূর্ণ করে। এখানে “রা”, “এ”, “এ” হলো বিভক্তি। এই বিভক্তি সমূহ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে শব্দগুলিকে পদে রূপান্তর করেছে।

সহজ কথায়, বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই একেকটি পদ। যেমন – করিম, রহিম, রাহিমা,  পাখি, নদী, ঢাকা, ফুল, তাঁরা, জন্য, দেশ ইত্যাদি।

পদ প্রধানত ২ প্রকার:

  1. সব্যয় পদ
  2. অব্যয় পদ

সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার:

  1. বিশেষ্য
  2. বিশেষণ
  3. সর্বনাম
  4. ক্রিয়া

১. বিশেষ্য পদ:

যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, সমষ্টি, কর্ম, ভাব, কাল বা গুণের নাম বুঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলা হয়। যেমন: মানুষ, কবির, নজরুল, ঢাকা, হিমালয়, পদ্মা, মেঘনা, অগ্নিবীণা, সভা, সংঘ ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদ আবার ৬ প্রকার:

  1. সংজ্ঞা বা নাম বাচক বিশেষ্যযেমন: রহিম, কুমিল্লা, যমুনা, সোনা, ওমর ইত্যাদি।
  2. জাতিবাচক বিশেষ্য। যেমন: মানুষ, ফুল, ফল, ছেলে, মেয়ে, পাহার, নদী ইত্যাদি।
  3. বস্তুবাচক বিশেষ্য। যেমন: খাতা, কলম, বাই, পানি, দুধ, ডাল, সোনা, রুপা ইত্যাদি।
  4. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যেমন: দল, সভা, সমিতি, জনতা, সংঘ, বাহিনী, পাল, ঝাঁক ইত্যাদি।
  5. ভাববাচক বিশেষ্য। যেমন: ভ্রমণ, গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন, শ্রবণ, বর্জন, দেখা ইত্যাদি।
  6. গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন: রাগ, হিংসা, ঘৃণা, সুখ, দুঃখ, দারিদ্র্য, যৌবন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি।
২. বিশেষণ পদ:

যে পদ দ্বারা বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলা হয়। যেমন: গরম চা, নীল আকাশ, ভালো ছাত্র, বেলে মাটি, হাজার লোক, সবুজ ক্ষেত, বুদ্ধিমান মেয়ে, হাসিটি চমৎকার ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ আবার ২ প্রকার:

  1. নাম বিশেষণ। যেমন: তাজা মাছ, দক্ষ শ্রমিক, কালো মেঘ, প্রথম ছেলে, ঠান্ডা হওয়া, চৌচালা ঘর, হাসিহাসি মুখ ইত্যাদি।
  2. ভাব বিশেষণ। যেমন: আস্তে বল, ধীরে চল, ধীরে ধীরে বায়ু বয়, ধবধবে সাদা চাদর ইত্যাদি।

৩. সর্বনাম পদ:

যে সব পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলা হয়। যেমন: আমি, তুমি, তারা, তোমরা, তিনি, তাহারা, সব, সকল, এই, ঐ, ইনি, ইহারা ইত্যাদি। 

সর্বনাম পদকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা: 

  1. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম। যেমন: আমি, তুমি, আমরা, তোমরা, সে, তিনি, তারা, তাহারা, তাঁরা, এরা, এ, ও, ওরা ইত্যাদি। 
  2. আত্মবাচক সর্বনাম। যেমন: নিজ, আপনি, স্বয়ং, খোদ ইত্যাদি।
  3. সমীপ্যবাচক সর্বনাম। যেমন: এ, এরা, এই, ইহারা, ইনি, ইহা ইত্যাদি। 
  4. দূরত্ববাচক সর্বনাম। যেমন: ঐ, ঐসব ইত্যাদি। 
  5. সাকুল্যবাচক সর্বনাম। যেমন: উভয়, সকল, সব, সমুদয়, তাবৎ ইত্যাদি।
  6. প্রশ্নবাচক সর্বনাম। যেমন: কে, কী, কি, কোনটা, কাহার, কেন, কোন, কিসে, কার ইত্যাদি। 
  7. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক সর্বনাম। যেমন: কেউ, যে কেহ, অন্য কেউ, কিছু কিছু ইত্যাদি। 
  8. ব্যাতিহারিক সর্বনাম। যেমন: নিজে নিজে, আপনা আপনি, আপসে, পরস্পর ইত্যাদি। 
  9. সংযোগজ্ঞাপক সর্বনাম। যেমন: যে, যা-তা, ‍যিনি, যারা, যাহারা, তিনি, যেটা, সেটা ইত্যাদি। 
  10. অন্যাদিবাচক সর্বনাম। যেমন: পর, অপর, অন্য ইত্যাদি। 
৪. ক্রিয়াপদ: 

যে সকল পদ দ্বারা কোন কাজ করা বুঝায় তখন তাকে ক্রিয়াপদ বলা হয়। অর্থাৎ যে সব পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের করা, হওয়া, খাওয়া, যাওয়া ইত্যাদি বুঝায় তখন তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন: পড়ছে, খেলছে, উঠলে, যেয়ে, গিয়ে, হাঁটছে ইত্যাদি। 

ক্রিয়াপদ ২ প্রকার। যথা: 

  1. সমাপিকা ক্রিয়া। যেমন: রহিম বই পড়ে, করিম স্কুলে যায়, কাল সাথী আসবে, মেয়েরা খেলা করছে ইত্যাদি। 
  2. অসমাপিকা ক্রিয়া। যেমন: রহিম স্কুলে গিয়ে…, দিনে সূর্য উঠলে…, তারা দৌড়ে গিয়ে.., তোমরা হাত-মুখ ধুয়ে.., ইত্যাদি। 

অসমাপিকা ক্রিয়া পদ কাকে বলে?

অব্যয় পদ: 

ব্যাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যেসব শব্দ / ধ্বনির বিভক্তি বা বচনভেদে কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ যে পদের কোনোভাবেই পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় পদ বলা হয়। যেমন: তবুও, কিন্তু, এবং, তথাপি, নতুবা, বরং, যেমন, ওহে, বটে, ব্যতীত, বেশ ইত্যাদি। 

বাংলা ভাষায় অব্যয় পদসমূহ ৩ ভাগে বিভক্ত। যথা: 

  1. খাঁটি বাংলা অব্যয়। যেমন: আর, ওরে, আহা, তবু, আবার, ও, হ্যাঁ, না, হায়, বাঃ, উঃ, হায়, ইশ, নাকি, তো, ধ্যাৎ ইত্যাদি।
  2. তৎসম অব্যয় শব্দ। যেমন: সদা, যথা, যদি, সহসা, বরং, বস্তুত, দৈবাৎ, হঠাৎ, অর্থাৎ, আপাতত, সুতরাং, অদ্যপি ইত্যাদি।
  3. বিদেশি অব্যয় শব্দ । যেমন: সাবাস, মারহাবা,আলবত, মাইরি, খুব, বহুত, খাসা ইত্যাদি।
অব্যয় প্রধানত চার প্রকার। যথা:
  1. সমুচ্চয়ী অব্যয়
  2. অনন্বয়ী অব্যয়
  3. অনুসর্গ বা পদান্বয়ী অব্যয়
  4. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়

সমুচ্চয়ী অব্যয়ের উদাহরণ: ও, এবং, হয়তো, তবু, তথা, আর, সুতরাং, বরং, অথচ, কিংবা, অথবা, নয়তো ইত্যাদি। 

অনন্বয়ী অব্যয়ের উদাহরণ: মরি মরি, ছিঃ, আঃ, উঃ, নিশ্চয়ই, আলবত, হ্যাঁ, বেশ তো, কী আপদ!, ওগো ইত্যাদি। 

অনুসর্গ বা পদান্বয়ী অব্যয়ের উদাহরণ: দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক, বিনা, ব্যতীত, চেয়ে, থেকে ইত্যাদি। 

অনুকার অব্যয়ের উদাহরণ: কড়কড়, মরমর, গরগ র, ঠন ঠন, ঝন ঝন, ঝম ঝম, রুম ঝুম, গুড় গুড়, কা কা , টুং টাং, কুহু কুহু, কল কল ইত্যাদি।

অনুকার অব্যয় পদ কাকে বলে?

আরো পড়ুন: 

স্বরধ্বনি বলতে কি বুঝায় ব্যাখ্যা কর উদাহরণ সহ?

অনুকার মানে কি বিস্তারিত ব্যাখ্যা কর?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link