মানসিক অবসাদ হলো এমন একটি অবস্থা যা আপনাকে ক্লান্ত করে ফেলে, আপনার উৎপাদনশীলতা এবং সামগ্রিক জ্ঞানীয় কার্যকে বাধাগ্রস্ত করে। তাছাড়া আপনি এটাও বলতে পারেন; মানসিক অবসাদ মস্তিষ্কের অতিরিক্ত কার্যকলাপের ফলাফল।
আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি মানসিক অবসাদ সমস্যায় ভুগছেন?
নিচের সাধারণ কারণগুলি হলো মানসিক অবসাদের লক্ষণ:
- শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকা
- হতাশ বা নিরাশ বোধ করা
- চাপ বা উদ্বেগ বোধ করা
- সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম
- অসহায়ত্ব অনুভূতি
- বিশৃঙ্খলা
- অন্যান্য মানুষের সাথে বিরক্তি
- প্রিয়জনের সাথে তর্ক বা বিচ্ছেদ
- বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন
- আত্মঘাতী চিন্তা
- যেকোনো কিছুতেই বিরক্তি প্রকাশ করা
- মনোনিবেশ করতে না পারা
- খারাপ সময়ে ধুমপান বা অ্যালকোহলের মতো পদার্থকে বেছে নেওয়া
আরো বিভিন্ন কারণ বা লক্ষণ রয়েছে মানসিক অবসাদের।
মানসিক অবসাদ এর খারাপ দিকগুলি কি কি?
মানসিক অবসন্নতার ফলে আপনি কোনো কিছুতেই ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন না; বেশিরভাগ সময়ই ভুল করতে থাকবেন। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানসিক অবসন্নতা শারীরিক পারফরম্যান্সকে কমিয়ে দেয়। তাছাড়া মানসিক সমস্যা থেকে আপনার অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়তে পারেন যেমন: মাথাব্যথা, ঘুম না হওয়া, শরীরে স্ট্রেস হরমোনগুলি হজম ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বমি বমিভাব, অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, অজ্ঞান হওয়া এবং মাথা ঘোরা ইত্যাদি।
আপনি যদি মনে করেন; মানসিক অবসাদ যে শুধু আপনার জন্য অমঙ্গল তা কিন্তু নয় এটি আপনার পরিবার, বন্ধু এবং অন্যান্যদের জন্যও অমঙ্গল হতে পারে। বিশেষ করে আপনার পরিবারের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে। তাই পরিবারের কল্যাণ এবং নিজেরর জন্য হলেও আপনাকে মানসিক অবসাদ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
আমরা এতক্ষণ মানসিক অবসাদ কি এবং মানসিক অবসাদ এর কারণ ও লক্ষণ এবং মানসিক অবসন্নতার খারাপ দিকগুলো জেনেছি আসুন জেনে নেই কিভাবে আমরা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাব।
মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়ঃ
১. নিজের যত্ন নিনঃ
আপনি আপনার প্রতিদিনের রোটিনের তালিকায় এগুলো রাখুন: ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ডায়েট খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করা ইত্যাদি। এগুলো আপনার মানসিক ক্লান্তি/অবসাদ কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট রাখবে।
২. নিজেকে সময় দিনঃ
একবার খেয়াল করে দেখুন আপনি আপনার প্রতিদিনের রোটিনে কতক্ষন নিজের পছন্দের জিনিসগুলিতে সময় দিচ্ছেন। ধরুন আপনি বই পড়তে, অঁকতে, নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে, নতুন রেসেপি রান্না করতে, গান গাইতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবাসেন তাহলে আপনি আপনার কিছু মূল্যবান সময় দিন আপনার পছন্দ বা ইচ্ছাগুলোতে।
৩. আপনার চিন্তাভাবনা এবং আবেগ পরিচালনা করুনঃ
মনে রাখবেন আপনি আপনার জীবনের যা চান তা পেতেও পারেন আবার নাও পেতে পারেন কিন্তু হতাস হওয়া যাবে না। আপনি আপনার ভাল দিনটিকে উপভোগ করুন এবং ভালো দিনটিকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করুন। আবার যখন খারাপ দিন আসবে তখন খুব কঠোর হবেন না বরং আপনার মনকে বিশ্রাম দিন।
আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা এবং আপনার আবেগগুলি পরিচালনা করা দুটি মানসিক দক্ষতা যা আপনি মানসিক ক্লান্তি হ্রাস করতে অর্জন করতে পারেন। যদি আপনি এ দুটির(চিন্তাভাবনা এবং আবেগ) ব্যবহার ঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে আপনি মানসিক অবসাদ প্রতিরোধ করতে পারবেন খুব সহজেই।
৪. প্রতিদিনের কাজগুলো ভাগ করে ফেলুনঃ
আপনার প্রতিদিনের রোটিনের কাজগুলো ছোট ছোট করে ভাগ করুন এবং প্রতিটি সফলভাবে অর্জন করুন। অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রচুর কাজের চাপে কোনো কাজই ঠিকভাবে করা হয় না কিন্তু আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো ভাগ করে ফেলন তাহলে আপনার কাজের ফলাফল ভালো হবে।
৫. সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করুন:
আমরা সাধারনত আমাাদের সমস্যাগুলো অন্যের কাছে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করি বা অন্যের কাছে কোনো কিছু চাইতে ইতস্তত বোধ করি। কিন্তু আপনি যদি ইতস্তত বা লজ্জাবোধ না করে আপনার সমস্যার কথা আপনার সহকর্মী বা প্রিয়জনের কাছে প্রকাশ করেন তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। তাই সবসময় আপনার সমস্যার কথা আপনার কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করুন অথবা সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করুন।
৬. অভ্যন্তরীণ প্রেরণার উৎস্যগুলি বিকাশ করুন:
আপনি কি করতে ভালোবাসেন? আপনার পছন্দের কাজগুলো কি? যে কাজগুলো করলে আপনাকে নিরাপদ এবং সুখী রাখে সেগুলো খোঁজে বের করুন এবং এগুলোতে সময় দিন। ধরুন আপনার ভ্রমণ করা খুব প্রিয় তাহলে প্রতিমাসে ছুটির দিনে আপনার পছন্দের স্থানে ঘুরে আসতে পারেন। আপনি আপনার অবসর সময়ে বিনোদনমূলক টিভি চ্যানেল দেখতে পারেন।
৭. অভিযোগ এড়িয়ে চলুনঃ
আপনার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগ থাকতে পারে তাই বলে কি আপনি বসে থাকবেন. মোটেও না বরং তাদের অভিযোগ এড়িয়ে নিজেকে সময় দিন, নিজের স্বপ্নের দিকে আরো মনোযোগী হোন এবং সফল হয়ে দেখিয়ে দিন আপনিও পারেন।
৮. প্রয়োজনে ডাক্তারের উপদেশ গ্রহণ করুন:
আপনি আপনার একান্ত গোপনীয় কথা যদি কারো সাথে শেয়ার করতে না পারেন তাহলে ডাক্তারের সাথে সমস্যার কথা খোলে বলতে পারেন এবং ডাক্তারের দেওয়া প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্স অনুযায়ী চললে আপনি আপনার মানসিক অবসাদ থেকে প্রতিরোধ হতে পারবেন।
শেষ কথা:
আপনার মানসিক অবসাদ থেকে রক্ষা পেতে হলে শারীরিক এবং মানসিক উভয় জায়গাতেই মনোনিবেশ দিতে হবে। অনুপ্রাণিত এবং উৎপাদনশীল থাকার জন্য সমস্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আপনি নিজেকে জানুন, নিজের যত্ন নিন এবং নিজেকে সময় দিন।
Leave a Reply