উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন বলে। প্রস্বেদন এর ইংরিজি হলো: Transpiration.
অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ তার দেহের অভ্যন্তরে অবস্থিত পানি বাষ্পাকারে বাহিরে বের করে তাকেই প্রস্বেদন বলা হয়।
জল মাটি থেকে গাছের শিকড়গুলিতে স্যাপউডের মাধ্যমে পাতায় চলে যায়। সূর্যের দ্বারা উষ্ণ জল, বাষ্পে পরিণত হয় (বাষ্পীভবন), এবং বেশিরভাগ পাতার পৃষ্ঠের নীচে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ছিদ্র (স্টোমাটা) দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকেই প্রস্বেদন বলা হয়ে থাকে। উদ্ভিদ দেহে শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়।
বিভিন্ন কারণে উদ্ভিদগুলিকে নিজেরাই শীতল করা প্রয়োজন। যখন তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে, এনার্জি সিস্টেমগুলি (বিপাকীয় ক্রিয়াগুলি) ধীর হয় এবং বৃদ্ধি এবং ফুল ফোটে বা ধীর হয়। প্রচণ্ড উত্তাপে, গাছপালা মারাত্মক চাপে থাকে এবং কখনও কখনও তাপের কারণে বুদবুদগুলি পানির প্রবাহকে বাধা দেয় এবং পানিশূন্যতার দিকে পরিচালিত করে। তাই উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রকিয়াটি একটি বাষ্পীভবন কুলিং সিস্টেম যা উদ্ভিদের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটি গাছপালাকে শীতল রাখতে সহায়তা করে থাকে।
উদ্ভিদ প্রস্বেদনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পত্রফলক দিয়ে শােষিত তাপশক্তি হ্রাস করে পাতার কোষগুলাের তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখে। অপরদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদের অনেক ধরনের উপকার করলেও এর কিছু অপকারী দিক রয়েছে তাই প্রস্বেদনকে necessary evil বলা হয়। যেমন: পানি শােষণের চেয়ে প্রস্বেদনে পানি হারানাের হার বেশি হলে উদ্ভিদের জন্য পানি এবং খনিজের ঘাটতি দেখা দিবে। এর ফলে উদ্ভিদটির মারাও যেতে পারে।
প্রস্বেদনের স্থানের ভিত্তিতে প্রস্বেদন তিন প্রকার যথা-
- পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন
- ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন
- লেন্টিকুলার প্রস্বেদন
প্রস্বেদনের গুরুত্ব:
প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদিও প্রস্বেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদ থেকে পানি বাষ্পাকার হয়ে বেরিয়ে যায় এবং উদ্ভিদকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। কিন্তু প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটি উদ্ভদের জন্য গুরুত্ব কারণ: এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার দেহের অতিরিক্ত পানি বের করে তার অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্ত করে। প্রস্বেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদ শীতল থাকে এবং প্রস্বেদনের মাধ্যমে কোষ রসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। প্রস্বেদনের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়।
Leave a Reply