প্রত্নতত্ব হলো অতীত মানবজীবন এবং তাদের ক্রিয়াকলাপের অধ্যয়ন। আপনি প্রত্নতত্বকে এভাবেও বলতে পারেন; এটি মূলত অতীত মানব আচরণের উপাদান বা মানুষ তৈরি বা ব্যবহৃত এবং অতীতের ফেলে রাখা জিনিসগুলি যা বিলুপ্তপ্রায় সে সংস্কৃতি পুনর্গঠন করা।
’প্রত্ন’ শব্দের অর্থ হলো পুরনো বা প্রাচীন। ‘তত্ব’ হলো – আসল বস্তু বা প্রকৃত অবস্থা। প্রত্নতত্বের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মুর্তি বা ভাস্কর্য, অলঙ্কার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদি।
আরো সহজে প্রত্নতত্বকে সংজ্ঞায়িত করলে আমরা বলতে পারি, প্রত্নতত্ব এমন এক বিদ্যা যা অতীত যুগের মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর ধ্বংষাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে যুগের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা বা অধ্যয়ন করা। এই ধ্বংসাবশেষকে শিল্পকর্ম বলা হয়।
প্রত্নতত্ব কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রত্নতত্ত্ব আমাদের অতীতে এবং এখন যা করে তার মাধ্যমে নিজেকে একটি প্রজাতি হিসাবে বুঝতে সহায়তা করে। এটি আমাদের অতীতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের গল্প বলে। লোকেরা প্রত্নতাত্ত্বিকতায় আগ্রহী কারণ তারা অতীত জানতে আগ্রহী। তাদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানতে পারে, পূর্বপুরুষদের জীবন-যাপন ও আচরণ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে। তাছাড়া, ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তগুলি আমাদের আগে যারা এসেছিল তাদের কাছ থেকে আমরা যে পাঠ শিখি তার উপর ভিত্তি করে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বজুড়ে জ্ঞান চর্চা করেন যারা আমরা কে এবং আমরা কোথা থেকে এসেছি সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অনুশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কাজ করে। এটি করতে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এমন প্রমাণ খুঁজে পান যা আমাদের ভবিষ্যত কী নিয়ে আসতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করে। এই প্রত্নতত্বের মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীতের মানবজীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি, অতীতে মানুষ কিভাবে জীবন-যাপন করেছে এবং তাদের আচার ও আচরণ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারি। যদি প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়টি না থাকতো তাহলে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশের কিছুই জানা যেতো না।
প্রত্নতত্ব বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া প্রত্ননিদর্শনগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। ঢাকা জাতীয় জাদুঘর, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রভৃতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদগুলো সংরক্ষণ করা আছে। এই সব প্রত্ননিদর্শনগুলো দেখার মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি।
বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রত্নতত্ব নিদর্শন হলো; পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, নওগাঁ, ভাসুবিহার, সীতাকোট বিহার, উয়ারী- বটেশ্বর, নরসিংদী, কুমিল্লায় কিছু প্রত্নতত্বস্থল হলো; শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, রানীর বাংলো, ইটাখোলামুড়া, ভোজ বিহার, রূপবান মুড়া, কুটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া এবং ময়নামতি ঢিবি।
প্রত্নতত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি।
Leave a Reply