অংশীদারি ব্যবসায় কি অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি

অংশীদারি ব্যবসায় কি? অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো চুক্তি। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কেক ভিত্তিতে যে ব্যবসায় পরিচালনা করে তাকেই অংশীদারি ব্যবসায় বলে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি কি?

চুক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। অংশীদারদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়বস্তু যে দলিলে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বলা হয়। অংশীদারি চুক্তিপত্রে অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনার ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশক হিসাবে কাজ করে। অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত যেন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তি লিখিত, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এবং মৌখিক হতে পারে।

তাই বলা হয়, অংশীদারদের মধ্যকার সম্পর্ক চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারদের মূলধন বিনিয়োগ, পরিচালনা ও মুনাফা বন্টন করা হয়। চুক্তিই অংশীদারদের দায় ও অধিকার নিশ্চিত করে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা কত?

অংশীদারি ব্যবসায় সাধারণত সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে, সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন সদস্য সংখ্যা। আবার, ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য সংখ্যা হবে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কি কি?

১. একাধীক সদস্য: অংশীদারি ব্যবসায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।

২. সদস্য সংখ্যা: সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন সদস্য সংখ্যা। এবং ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য সংখ্যা হবে।

৩. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক: চুক্তিই হলো অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়।

৪. মূলধন সরবরাহ: চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারগণ ব্যবসায়ে মূলধন সরবরাহ করে। যদি চুক্তিতে উল্লেখ থাকে তাহলে মূলধন ছাড়াও ব্যবসায়ের অংশীদার হওয়া যায়। যেমন: নামমাত্র অংশীদার।

৫. পরিচালনায় অংশগ্রহণ: অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সকল অংশীদারগন ব্যবসায়ের পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে, সকলের পক্ষে একজন দ্বারা অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

৬. মুনাফা বণ্টন: অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সকল অংশীদারদের মধ্যে সমানভাবে মুনাফা বণ্টন করা হয়। তবে চুক্তিতে যদি নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ থাকে তাহলে চুক্তি অনুসারে মুনাফা বণ্টন হবে।

৭. দায়: অংশীদারি ব্যবসায়ের দায় অসীম। এরূপ ব্যবসায়ের যে কোনো পরিমাণ দায়ের জন্য সকল অংশীদাররা ব্যক্তিগতভাবেও দায়বদ্ধ থাকে। আর এ ব্যবসায়ে দায়ের জন্য অংশীদাররা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দায়ী থাকে।

৮. পারস্পরিক বিশ্বাস: অংশীদারদের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই হলো অংশীদারি ব্যবসায়ের অন্যতম বিশেষত্ব। অংশীদারি ব্যবসায়ের সফলতা পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল।

৯. আইনগত সত্তা: অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দুইভাবেই হতে পারে। তবে নিবন্ধিত হলে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তবে ব্যবসায়টি নিবন্ধিত হলেও কোনো ধরনের আইনগত সত্তা তৈরি হয় না। তাই অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে নায় বরং অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

১০. বিলোপসাধন: অংশীদারি ব্যবসায়ে অংশীদারদের মধ্যকার অংশীদারি সম্পর্কের বিলুপ্তিকেই অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন বলা হয়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা কি কি?

  1. সহজ গঠন প্রণালি
  2. সমন্বিত মূলধন
  3. সম্মিলিত সিদ্ধান্ত
  4. সম্মিলিত প্রচেষ্টা
  5. দক্ষ পরিচালনা
  6. ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ
  7. সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ
  8. বিশেষায়নের সুযোগ
  9. নমনীয়
  10. কম আইনী বাধ্যবাধকতা

অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধা কি কি?

  1. অসীম দায়
  2. অনিশ্চিত স্থায়িত্ব
  3. গোপনীয়তার অভাব
  4. পরস্পর বিশ্বার ও আস্থার অভাব
  5. অ-হস্তান্তরযোগ্য মালিকানা
  6. সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব
  7. অংশীদার এবং পরিচালনার মধ্যে মতবিরোধ
  8. ব্যবসায়ের সম্পসারণের সীমাবদ্ধতা

অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ:

  1. সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়:
    ক. ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায়
    খ. নির্দিষ্ট অংশীদারি ব্যবসায়: 
    A.নির্দিষ্ট মেয়াদী অংশীদারি ব্যবসায়
    B. নির্দিষ্ট লক্ষ্যকেন্দ্রিক অংশীদারি ব্যবসায়
  2. সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায়

অংশীদারদের প্রকারভেদ:

  1. সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার
  2. নিষ্ক্রিয় অংশীদার
  3. নামমাত্র অংশীদার
  4. আপত দৃষ্টিতে অংশীদার
  5. সীমিত অংশীদার
  6. কর্মী অংশীদার
  7. আচরণে অনুমিত অংশীদার
  8. প্রতিবন্ধ অংশীদার

অংশীদারি ব্যবসায় এর চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু কি কি?

  1. অংশীদারি ব্যবসায়ের নাম ও ব্যবসায়ের ঠিকানা
  2. ব্যবসায়ের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও আওতা
  3. ব্যবসায়ের কার্যক্রম বিস্তৃতির বর্তমান ও সম্ভাব্য এলাকা
  4. অংশীদারদের নাম, ঠিকানা ও পেশা
  5. ব্যবসায়ের স্থায়িত্বকাল
  6. অংশীদারদের মোট মূলধনের পরিমাণ
  7. ব্যবসায়ের মোট মূলধনের পরিমাণ
  8. ব্যবসায়ের আর্থিক বছর শুরু ও শেষ সময়
  9. অংশীদারদের দায়িত্ব, ক্ষমতা ও অধিকার
  10. ব্যবসায়ের লাভ লোকসান বণ্টন পদ্ধতি
  11. ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
  12. অংশীদারদের মূলধনের উপর সুদ দেয়া হবে কিনা, হলে কি হারে হবে
  13. অংশীদারগণ ব্যবসায় হতে কোন অর্থ উত্তোলন করতে পারবে কিনা
  14. অংশীদারদের উত্তোলিত অর্থের উপর সুদ ধরা হবে কিনা, হলে কি হারে হবে
  15. ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণ ও হিসাব নিরীক্ষা পদ্ধতি
  16. ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি ইত্যাদি।

 অংশীদারি ব্যবসায় অংশীদার হবার অযোগ্য যারা:

  1. নাবালক ব্যক্তি
  2. পাগল ও অজ্ঞান ব্যক্তি
  3. মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
  4. দেউলিয়া ব্যক্তি
  5. সরকারি কর্মচারি
  6. প্রতিষ্ঠান বা সংঘ
  7. রাষ্ট্রীয় বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি (যেমন: রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিবর্গ, ইত্যাদি)
  8. বিদেশি রাষ্ট্রদূত
  9. বিদেশি শত্রু
  10. দেশদ্রোহী

অংশীদারি ব্যবসায় এর বিলোপসাধন পদ্ধতি:

  1. চুক্তি অনুসারে বিলোপসাধন
  2. বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন
  3. বিশেষ ঘটনা সাপেক্ষে বিলোপসাধন
  4. বিজ্ঞপ্তির দ্বারা বিলোপসাধন
  5. আদালত কর্তৃক বিলোপসাধন

সর্বনিম্ন দুই জন এবং সর্বোচ্চ বিশ জন ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪ নং ধারায় বলা হয়ে যে, “ সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাদের প্রত্যেককে অংশীদার এবং সম্মিলিতভাবে তাদের ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলা হয়”

একমালিকানা ব্যবসায়ের সকল অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্যই মূলত অংশীদারি ব্যবসায় গড়ে ওঠে। অংশীদারি ব্যবসায়ের সকল দায় প্রত্যেক অংশীদার ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্ঠিগতভাবে বহন করে। আর অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অংশীদারি চুক্তিপত্র লিখিত, অলিখিত ও মৌখিক হতে পারে। অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক, বিশেষ ঘটনা সাপেক্ষে, বিজ্ঞপ্তির দ্বার, আদালত কর্তৃক বিলোপসাধন হতে পারে।

Comments

One response to “অংশীদারি ব্যবসায় কি? অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link