ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহ কি কি

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহ কি কি?

আমরা জানি যে, একটি দেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলা হয়।

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহ:

  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
  3. সামাজিক পরিবেশ
  4. রাজনৈতিক পরিবেশ
  5. প্রযুক্তিগত পরিবেশ
  6. আইনগত পরিবেশ

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নরূপ:

১. প্রাকৃতিক পরিবেশ: একটি দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, সাগর, নদ-নদী, আয়তন, অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদির সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করার আগে প্রাকৃতিক বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত। কারণ ব্যবসায় প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি ইত্যাদি ব্যবসায়ের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।

২. অর্থনৈতিক পরিবেশ: কোনো দেশে জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, মূলধন ও জনসম্পদ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক নীতি, বাণিজ্য চক্র, অর্থনৈতিক সম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে যে পরিবেশের গঠিত হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে।

অর্থনৈতিক পরিবেশ একটি দেশের ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিটি দেশে আলাদা আলাদা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র এবং মিশ্র অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত।

৩. সামাজিক পরিবেশ: একটি দেশের সমাজের বা জাতির মানুষের সংখ্যা, ধর্ম, বিশ্বাস, চিন্তা-চেতানা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, জীবন শৈলী ও দেশীয় ঐতিহ্য এসব মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতা গড়ে ওঠে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।

সামাজিক পরিবেশ বলতে আর্থ-সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বোঝায়। একটি সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা, ইচ্ছা, অভ্যাস, রীতিনীতি ইত্যাদির ব্যবসায়কে প্রভাবিত করে থাকে।

৪. রাজনৈতিক পরিবেশ:

রাজনৈতিক পরিবেশ হলো একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন:  দেশের সার্বভৌমত্ব, সরকারের স্থিতিশীলতা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও তাদের চিন্তা-ভাবনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি মিলিত হয়ে যে পারিপার্শ্বিকতার সৃষ্টি হয় তাকে রাজনৈতিক পরিবেশ বলে।

ব্যবসায়ের উপর রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব রয়েছে বহুগুণে। একটি দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সেই দেশের ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপগুলি: সিদ্ধান্ত, প্রচার, উৎসাহ, অবস্থান, নির্দেশ এবং নিয়ন্ত্রণ করে। দক্ষ ও গতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয়। এটি অর্থনৈতিক বিকাশের একটি প্রাথমিক উপাদান।

৫. প্রযুক্তিগত পরিবেশ: ব্যবসায়ের পরিবেশের প্রযুক্তিগত উপাদানগুলি যেমন: বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ ইত্যাদি মিলিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলে।

মানসম্মত পণ্য ও পরিষেবা, পণ্যগুলির গুণমান, উৎপাদনশীলতা এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন: যন্ত্রপাতি এবং অটোমেশন ইত্যাদি। একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় পরিবেশে প্রযুক্তি উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। প্রযুক্তি ব্যবসায়কে আরও উন্নত ও দ্রুত চালাতে সহায়তা করে। নতুন প্রযুক্তি গ্রাহকদের কাছে নতুন পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

৬. আইনগত পরিবেশ: একটি দেশের বাণিজ্যিক আইন, শিল্প আইন, পরিবেশ সংক্ষরণ আইন, আন্তর্জাতিক আইন, ভোক্তা আইন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা আইন ইত্যাদি মিলিত হয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে আইনগত পরিবেশ বলে।

অবৈধ ও বেআইনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম রোধ করতে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে সাধরণ জনগণকে রক্ষা করার জন্য। একজন ব্যবসায়ীকে সরকারের প্রদত্ত সকল আইন মেনেই ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সুতরাং আইনগত পরিবেশ ব্যবসায়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link