উদ্যোক্তা কাকে বলে সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য কি কি

উদ্যোক্তা কাকে বলে | সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য কি কি?

উদ্যোক্তা হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার কর্মসংস্থানের জন্য নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ের ঝুঁকি বহন করে এবং ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ মুনাফা একা ভোগ করেন।

সুতরাং, একজন উদ্যোক্তা একটি নতুন ব্যবসায় উদ্ভাবন বা অন্য কোনো ব্যবসায় শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ব্যবসায়ের ঝুঁকি বহন করেন আর ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ লাভ একা ভোগ করেন।

Schumpeter এর মতে উদ্যোক্তা হলো:

  • একটি নতুন পন্যের পরিচয় বা উদ্ভবন করা।
  • উৎপাদনের একটি নতুন পদ্ধতি শুরু করা।
  • একটি নতুন বাজারের উদ্ভাবন করা।
  • সরবরাহের একটি নতুন উৎস বের করা।
  • একটি নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান শুরু করা।

উদ্যোক্তাকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করা করা যায়। যেমন: যে ব্যক্তি একটি নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করার ঝুঁকি গ্রহণ করে তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়। আবার যিনি তার আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে নতুন কোনো কাজ হাত দেন তখন ঐ ব্যক্তিকেও উদ্যোক্তা বলা হবে।

উদ্যোগ যেকোনো বিষয়েই হতে পারে তবে সেটি অবশ্যই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে এবং সেখানে ঝুঁকি বিদ্যমান থাকবে। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তিই উদ্যোক্তা পারে, আর যিনি ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই উদ্যোক্তা।

সফল উদ্যোক্তার উদাহরণ:

বিল গেটস:

বিল গেটস আমাদের যুগের একজন অন্যতম বিখ্যাত উদ্যোক্তা। যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। বিশ্বের বৃহত্তম পিসি সফটওয়্যার সংস্থা মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বিল গেটস ছিলেন ব্যক্তিগত কম্পিউটার বিপ্লবের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। অ্যালেন, বলমার এবং অন্যদের সহায়তায় গেটস মাইক্রোসফ্টকে বিশ্বের বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী প্রযুক্তি সংস্থার অন্যতম হিসাবে গড়ে তুলেছিল।

ইলন মাস্ক:

ইলন মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত আমেরিকান শিল্প প্রকৌশলী এবং একজন সফল উদ্যোক্তা, তিনি পেপালের সহ-প্রতিষ্ঠা এবং মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাছাড়া তিনি বহুমুখী প্রযুক্তির উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত বৈদ্যুতিন গাড়ি সংস্থা টেসলার প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন। ইলন মাস্ক বিশ্বের ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন, তার সম্পদের ১৮৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

স্টিভ জবস:

স্টিভ জবস যুক্তরাষ্ট্রের একজন  সফল উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। এ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমরা সবাই তাকে সহজেই চিনি। ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল অ্যাপল কম্পিউটার সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্টিভ জবস এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওয়াজনিয়াক এর মাধ্যমে। তাঁর মৃত্যুর সময়, তাঁর সম্পদ ৮.৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল।

মার্ক জাকারবার্গ:

মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ফেসবুক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শেয়ারহোল্ডারকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছাত্রাবাস থেকে ফেসবুক চালু করেছিলেন। তার একটি উক্তি “সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কোনও ঝুঁকি না নেওয়া”।

একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী:

১. শৃঙ্খলাবদ্ধ (Disciplined):

এটি একজন সফল উদ্যোক্তার অন্যতম প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যক্তিরা তাদের ব্যবসায়িক কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করেন। এবং তাদের লক্ষ্যে যে কোনও বাধা বা বিঘ্ন দূর করার কাজে নিয়োজিত থাকে। সফল উদ্যোক্তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিদিনের পদক্ষেপ নিতে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ। জীবন ও ব্যবসায় সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ স্ব-শৃঙ্খলা। আপনি যদি নিজের মতো করে নিজেকে অনুশাসন করতে পারেন, তাহলে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

২. আত্মবিশ্বাস (Confidence):

উদ্যোক্তা তার ব্যবসায় শুরু করে আত্মবিশ্বাসের সাথে। সে কখনোই তার ব্যবসায় বা উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ থাকে না বরং সফল হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যায়। তাই তারা যা কিছু করে তার মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসকে তারা বহন করে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারা তাদের কাজে মনোনিবেশ করে এবং সামনে এগিয়ে যায়।

৩. স্ব-উদ্যোক্তা (Self-starter):

উদ্যোক্তারা জানেন যে যদি কিছু করা দরকার হয় তবে তাদের নিজেরাই এটি শুরু করা উচিত। তারা তাদের লক্ষ্য ঠিক করে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা তাদের কাজে সর্বদা সক্রিয় থাকে, কারো অনুমতির জন্য তারা অপেক্ষা করে না। আপনার মাথায় যদি কোনো আইডিয়া থাকে তাহলে কারো জন্য অপেক্ষা না করে নিজে থেকেই শুরু করুন।

৪. প্রতিযোগিতামূলক (Competitive):

বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুবই প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফল হতে হলে আপনাকে অন্যের চেয়ে আরও ভাল কাজ করতে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আরো ভালো মানের মান সম্মত পণ্য বা সেবা প্রদান করতে হবে। তাই একজন উদ্যোক্তাকে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ধারণ করতে হয়।

৫. সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা (Creative thinking):

একজন উদ্যোক্তা সৃজনশীল মানসিকতাসম্পন্ন হতে হয়। উদ্যোক্তারা যখন তাদের উদ্যোগ শুরু করে তখন নানবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবং সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের সৃজনশীল মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে সমাধান খোঁজে বের করতে হয়। তাছাড়াও সৃজনশীল উপায়ে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা শুরু করতে পারে। সৃজনশীলতা একজন উদ্যোক্তাকে অনন্য করে তুলে।

৬. ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতা (Risk-taking ability): 

একজন উদ্যোক্তা যখন উদ্যোগ গ্রহণ করে তখনই সে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা নিয়ে তার ব্যবসায় শুরু করে। যেকোনো ব্যবসায় শুরু করলে সেটি লাভবান হতেও পারে আবার ক্ষতিও হতে পারে। তাই উদ্যোক্তাগণ ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা সম্পন্ন হতে হয়। তবে উদ্যোক্তারা ঝুঁকি গ্রহণের পূর্বে সঠিক পরিকল্পনা করে তাদের লক্ষ্য ঠিক করেন। তাছাড়া, একজন সফল উদ্যোক্তা জানে যে কখন ঝুঁকি নিতে হয় এবং কোন ঝুঁকিটি সংস্থা বা নিজের পক্ষে উপকারী বা ক্ষতিকারক হবে।

৭. দৃঢ় সংকল্প (Determination): 

উদ্যোক্তারা ব্যর্থতাকেই শেষ গন্তব্য মনে করে না বরং তারা ব্যর্থতাকে তাদের সাফল্যের সুযোগ হিসাবে দেখে। তাই তারা তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সফল করতে সর্বদা বদ্ধপরিকর। কোনো কিছুতে সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের চেষ্টা থামায় না। সফল উদ্যোকারা মনে করেন যে, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

৮. নেতৃত্বের দক্ষতা (Leadership Skills):

একজন উদ্যোক্তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা থাকতে হয়।  প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদের সাথে সঠিকভাবে যোগাগোগ করতে হলে উদ্যোক্তাকে নেতৃত্ব দানের দক্ষতা থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তারা তাদের কর্মীদের কীভাবে অনুপ্রেরণা করতে হয় তা জানে তাই ব্যবসায় সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

৯. অধ্যবসায় (Persistence):

অধ্যবসায় হলো একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে মৌলিক এবং প্রয়োজনীয় গুণ। এটি একটি অনিবার্য গুণ যা জীবনের সমস্ত দুর্দান্ত সাফল্যের চাবিকাঠি। একজন সফল উদ্যোক্তা প্রায়শই অফিসে পৌঁছে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এবং সবার শেষে অফিস থেকে কাজ শেষ করে বের হন। উদ্যোক্তারা তাদের কাজের প্রতি এতই অধ্যবসায় থাকেন যে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে লেগে থাকেন। তারা কখনো আজকের কাজ আগামীকালের জন্য রেখে দেয় না।

১০. প্যাশন (Passion):

একজন সফল উদ্যোক্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হল প্যাশন। উদ্যোক্তার যে কাজকে ভালোবাসেন সেটিই করেন। তিনি যে কাজ করে আনন্দ পান সেটিই করেন। সুতরাং একজন উদ্যোক্তা তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তার কাজের প্রতি প্যাসন থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তার মনে উদ্দীপনা তৈরি হওয়া শুরু হয় যখন সে তার কাজকে ভালোবাসেন এবং গ্রহণ করে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন।

একজন উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি:

  1. দায়বদ্ধ (Responsible)
  2. কঠোর পরিশ্রমী (Hard Worker)
  3. ঝুঁকি গ্রহণ (Risk Taker)
  4. সৃজনশীল (Creative)
  5. উদ্ভাবনী (Innovative)
  6. নমনীয় (Flexible)
  7. স্বাধীন (Independent)
  8. আশাবাদী (Optimistic)
  9. আত্মবিশ্বাস (Self-confidence)
  10. সংকল্পবদ্ধ (Determined)
  11. স্ব-পরিচালিত (Self-directed)
  12. বোধগম্য বা বুঝার ক্ষমতা (Perceptive) 
  13. ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া (Learn from mistakes)
  14. নেতৃত্ব নেওয়ার সক্ষমতা (Able to take the lead)
  15. কার্যকর যোগাযোগকারী (Effective communicator)
  16. সমালোচনার প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল (Responsive to criticism)
  17. অধিক কাজ করার ক্ষমাতা (High degree of energy)
  18. প্রয়োজন/ অভাব অনুমান করার ক্ষমতা (Ability to anticipate needs)

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link