অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কাকে বলে? অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কত প্রকার?

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কাকে বলে? অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কত প্রকার?

কোন দেশের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে যে বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয় কার্য সম্পাদিত হয় তখন তাকে অভ্যন্তরীন বাণিজ্য বলে। আমরা জানি যে, একটি দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবা দেশে এবং দেশের বাইরে বিক্রি হতে পারে। যখন পণ্য বা সেবা দেশের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে ক্রয় বিক্রয় হয় তখন এটিকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অপর নাম দেশীয় বাণিজ্য ( domestic trade). কোনো দেশের জিডিপির বেশিরভাগ অবদান অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য থেকে আসে। 

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য: 

  • পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় একটি দেশের সীমানার মধ্যে হয়ে থাকে।
  • পণ্য ও সেবার লেনদেনের জন্য অর্থ প্রদান করা হয় দেশীয় মুদ্রায়।
  • অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে উৎপাদক, ভোক্তা এবং মধ্যস্থদের মধ্যে লেনদেন জড়িত।
  • অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দেশের প্রচলিত আইনগুলি মেনে চলতে হয়।
  • এই বাণিজ্যে কোনো ধরনের কাস্টম  বা আমদানি শুল্ক জড়িত থাক না, তবে ক্রেতাদের সরকারকে কর প্রদান করতে হবে।

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. পাইকারি ব্যবসায় / Wholesale
  2. খুচরা ব্যবসায়ী / Retail

১. পাইকারি ব্যবসায়: 

পাইকারি ব্যবসায় হলো প্রস্তুতকারক বা আমদানিকারকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে তা খুচরা বিক্রেতা বা অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রয় করা। অর্থাৎ পাইকারি বাণিজ্য বলতে বুঝায়, খুচরা বিক্রেতা বা অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছে পণ্য বিক্রয়ের জন্য উৎপাদককারী বা প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ক্রয় করা। 

যারা পাইকারি ব্যবসায় নিয়োজিত থাকেন তাদেরকে পাইকার বলা হয়। তারা ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের শধ্যে এবং শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ও শিল্প মালিকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। পাইকাররা একটি দেশের বাণিজ্যচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। তারা খুচরা বিক্রেতাদের সাথে উৎপাদনকারীদের মধ্যে সংযোগ করতে সহায়তা করে।

পাইকারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য সমূহ:

  • পাইকারি ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য প্রচুর পরিমাণে মূলধন প্রয়োজন।
  • তারা খুচরা বিক্রেতা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রি করে কিন্তু তারা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে না।
  • পাইকারী ব্যবসায়ীদের ক্রিয়াকলাপ হলো, পণ্যগুলিকে গ্রেডিং করা, ছোট লটে প্যাক করা, সেগুলি সংরক্ষণ করা, পণ্য পরিবহন এবং প্রচার করা, বাজার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।
  • পাইকারী ব্যবসায়ীরা সাধারণত এক বা একাধীক পণ্য সমগ্রী লেনদেন করে থাকে। যেমন: যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল, ঔষুধ ইত্যাদি।

২. খুচরা ব্যবসায়ী:

খুচরা ব্যবসায় হলো পাইকারদের কাছ থেকে বা অন্যান্য উৎস্য হতে পণ্য সামগ্রী কয় করে তা চূড়ান্ত গ্রহকদের কাছে বিক্রয় করা। খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ করে। যারা খুচরা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত তাদেরকে খুচরা বিক্রেতা বলা হয়। ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খুচরা বিক্রেতারা স্বল্প পরিমাণে পণ্য বিক্রি করে।

চূড়ান্ত গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রির সাথে সম্পর্কিত ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ হল খুচরা ব্যবসায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা হলো বণ্টণ চ্যানেলের চূড়ান্ত পর্যায়। পাইকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে পণ্য ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতা এটি চূড়ান্ত গ্রাহকদের কাছে অনেক ছোট লটে বিক্রি করে। যেমন: বই, কলম, খাতা বিক্রয় করা, বাজারে বা রাস্তার পাশে কসমেটিকস পণ্য, সবজি বিক্রি ইত্যাদি।

খুচরা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য: 

  • খুচরা ব্যবসায় সাধারণত বিভিন্ন আইটেমের বা পণ্যসামগ্রীর সাথে জড়িত। যেমন: বই, খাতা, কলম, কসমেটিক্স, দৈনন্দিন জিনিসপত্র ইত্যাদি।
  • পাইকারের কাছ থেকে অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করে তা চূড়ান্ত ভুক্তার নিকট বিক্রয় করে।
  • খুচরা ব্যবসায় সাধারণত বাজারের প্রধান ফটকে বা গ্রাহকদের কাছাকাছি অঞ্চলে হয়।
  • একজন খুচরা বিক্রেতার প্রস্তুতকারকের সাথে (পাইকারদের মাধ্যমে) অপ্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে ।

সুতরাং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা জাতির উন্নয়নে সহায়তা করে এবং জিডিপি বৃদ্ধি করে।

Comments

One response to “অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কাকে বলে? অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কত প্রকার?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link