হৃদরোগ যদিও পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না তবে আমরা এর অত্যাধিক ঝুঁকি হতে রক্ষা পেতে পারি। বর্তমান সময়ে হৃদরোগের বেশিরভাগ রুপই চিকিৎসাযোগ্য। আমরা চাইলেই এর ঝুঁকির আশংকা থেকে বাঁচতে পারি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে। হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে, যেমনঃ নিয়মিত অনুশীলন বা ব্যায়াম করা, ডায়েট রক্ষা করা, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো পরিহার করা, ধূমপান পরিহার করা, মদ্যপান থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।
আপনাকে আপনার জীবনযাত্রায় বড় এবং স্থায়ী পরিবর্তন করতে হবে হৃদরোগ তেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। হৃদরোগ বা হার্ট আক্রান্ত হয়ে গেলে আপনাকে আজীবন এর কষ্ট ভোগতে হবে। তাই আগে থেকেই নিজেকে এবং নিজের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করে সচেতন হওয়াটাই হবে আপনার প্রথম প্রদক্ষেপ।
হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাবার উপায়/করণীয় সমূহঃ
১. ধূমপান পরিহার করুনঃ
আপনি যদি ধূমপায়ী হন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে কারন ধূমপায়ীগন হার্ঠ অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা সাধারন মানুষ থেকে দ্বিগুণের বেশি। হার্ট অ্যাটাক হওয়া মানে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়াও ধূমপান ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, হার্ট অ্যাটাট এবং স্ট্রোকের কারণ।
যদি আপনি ধূমপায়ী না হন তবে সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়া এড়াতে ভুলবেন না। তামাকের রাসায়নিকগুলি আপনার হার্ট এবং রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া আপনার রক্তে অক্সিজেন পরিমাণ হ্রাস করে যা আপনার রক্তচাপ এবং হার্টের ঝুঁকির হারকে বাড়ায় কারণ আপনার হার্টকে আপনার দেহ এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সুতরাং, আমরা সকলেই ধূমপনকে না বলি এবং সুস্থ থাকি।
২. স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করুণঃ
হার্টের রোগ প্রতিরোধের জন্য হার্টের স্বাস্থ্যকর ডায়েট রক্ষা করা মুখ্য। স্বাস্থ্যকর ডায়েট আপনার হার্টকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি আপনার রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
যেসকল খাবার খাওয়া উচিতঃ
- শাক-সবজী
- ফলমূল
- মটরশুটি
- গোটা শস্য
- চর্বিহীন দুগ্ধজাতীয় খাবার
- হাঁস
- বাদাম
- মাছ
যেসকল খাবার খাওয়া উচিত নয়ঃ
- লবণ
- চিনি, মিষ্টি
- এলকোহল
- লাল মাংস
- প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট
- পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য
- ভাজা ফাস্ট ফুড, চিপস, বেকড সামগ্রী
৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী কেননা উচ্চ কোলেস্টেরল আপনার ধমনীগুলি আটকে রাখতে পারে এবং আপনার করোনারি ধমনী রোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার ডাক্তার এর পরামর্শ নিন, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে।
আপনার দেহের জন্য অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল প্রয়োজন। তবে অনেকেরই খুব বেশি কোলেস্টেরল থাকে। খারাপ কোলেস্টেরল হলো LDL কোলেস্টেরল। অন্যদিকে ভাল কোলেস্টেরল হলো HDL কোলেস্টেরল।
৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকির কারণ। ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি লবন খাওয়া পরিহার করার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা যায় কিছুটা। তবে উচ্চ রক্তচাপের জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করা নিশ্চিত করুন এবং ডাক্তরের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
১৮ বছর বয়স থেকে আপনার রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ দেখার জন্য আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের জন্য স্ক্রিন করা প্রয়োজন প্রতি দুবছরে অন্তত একবার পরিমাপ করা উচিত।
৫. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুনঃ
আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকে তাহলে তা দ্রুত কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিন কেননাা অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার ওজন হ্রাস করার মাধ্যমে আপনার রক্তের নির্দিষ্ট ফ্যাটগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে, আপনার রক্তে শর্করাকে কমিয়ে দিতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
নিয়মিত অনুশীলন করা এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট রক্ষা করার মাধ্যমে আপনার ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।
৬. নিজেকে সক্রিয়া করাঃ
যারা সক্রিয় বা active তারা নিয়মিত ব্যায়ম করার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছে অথচ যারা বিপরীতে আছে তাদের ঝুঁকির পরিমান খুবই বেশি। তাই নিজেকে সক্রিয় করে তোলাটা খুবই জরুরী। সচেতন মানুষরাই খুব তারাতারি হৃদরোগ এর ঝুঁকি এড়াতে পারে। ব্যায়াম কররা আগে ডাক্তারের সাতে যোগাযোগ করুন এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
ডায়াবেটিস আক্রান্ত অনেকেই জানে না যে ডায়াবেটিস হৃদরোগের সম্ভাবনাকে আরও বেশি বাড়িয়ে তুলে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান, স্থূলত্ব এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিসের জন্য নিয়মিত স্ক্রিন করুন এবং চিকিৎসা করুন।
৮. চাপ এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
আপনার মানসিক চাপ এবং রাগকে নিয়ন্ত্রন করা খুবই জরুরী কেননা স্ট্রেস বা চাপ বড়ার ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। চাপ বা স্ট্রেস প্রদাহ বৃদ্ধি করে, আপনার কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করাকে বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায় এমনকি আপনার রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করুন।
গভীর শ্বাস প্রশ্বাস বা যোগব্যায়ামের মতো শিথিলকরণ কৌশলগুলি অনুশীলন করার মাধ্যমে আপনার মানসিক চাপ এবং রাগকে দমন করুন।
৯. অ্যালকোহল খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ
বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে, ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াতে, ফ্যাট লিভারে অবদান রাখতে এবং চিনির ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। তাছাড়াও অ্যালকোহল পান করার ফলে স্থূলত্ব, মদ্যপান, আত্মহত্যা এবং দুর্ঘটনার ঘটতে পারে।
তাই আমাদের উচিত অ্যালকোহল পান করা থেকে নিজেদের বিরত রাখা।
১০. নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ
নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনার শরীরের পেশী এবং হার্টকে আরও শক্তিশালী করা যায়। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ বার কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আপনার হার্টকে উপকৃত করতে পারে। ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের মেদ কমাতে পারেন, সুতরাং নিয়মিত ব্যায়ম করলে আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।
১১. পরিমিত ঘুমানোঃ
যে ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তাদের স্থূলত্ব, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং হতাশার ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুম দরকার।একটি ঘুমের সময়সূচী সেট করুন এবং প্রতিদিন সময়মত পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান।
সুতরাং হৃদরোগ থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে উপরের উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত। সবকিছুই সময়মত করলে আপনি সঠিক ফলাফল অর্জন করবেন। নিজেকে সুস্থ্য রাখুন এবং অপরকেও সচেতন করুন।
আরও পড়ুনঃ
Leave a Reply