বাগযন্ত্রের সাহায্যে তৈরিকৃত অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে। এখানে বাগযন্ত্র হলো গলনালি, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদির সমাবেশ।
আরো সহজভাবে, মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কন্ঠনিঃসৃত বা মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টিকে ভাষা বলা হয়।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম ভাষা”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগযেন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে”
ভাষা কত প্রকার ও কি কি?
ভাষা দুই প্রকার:
- মৌখিক ভাষা : যে ভাষার কোনো লেখার ব্যবস্থা নেই তাকে মৌখিক ভাষা বলে।
- লিখিত ভাষা : যে ভাষার লিখন ব্যবস্থা আছে তাকে লিখিত ভাষা বলে।
ভাষার লিখন ব্যবস্থা কত প্রকার ও কি কি?
ভাষার লিখন ব্যবস্থা ৩ প্রকার:
- বর্ণভিত্তিক : যে সব ভাষার বর্ণ রয়েছে যেমন: বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি। এইসব ভাষার লিখন ব্যবস্থা হচ্ছে বর্ণভিত্তিক।
- অক্ষরভিত্তিক : অক্ষর ( কথার টুকরো অংশ) অনুযায়ী সেসকল ভাষা লেখা হয় তাকে অক্ষরভিত্তিক লিখনরীতি বলে। যেমন: জাপানি ভাষা।
- ভাবাত্মক: যেসব ভাষায় লেখার জন্য বর্ণ কিংবা অক্ষর কোনোটাই ব্যবহার করা হয় না, ছবি এঁকে এসব ভাষা লেখা হয়, এই লিখন ব্যবস্থাকেই ভাবাত্মক বলা হয়। যেমন: চীনা, কোরীয় ভাষা।
ভাষা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে।
- ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আর ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
- ভাষার মূল উপাদান হলো ধ্বনি। আর অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।
- বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।
- বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা।
ভাষা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন: ভাষার ক্ষুদ্রতম একক কি?
উত্তর :ধ্বনি।
প্রশ্ন: ভাষার মূল ভিত্তি কি?
উত্তর: ধ্বনি।
প্রশ্ন: ধ্বনির সাধারণ অর্থ কি?
উত্তর: যেকোনো ধরনের আওয়াজ।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যিক নিদর্শন কি?
উত্তর: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে কোন দশকে?
উত্তর: খ্রিষ্টিয় দশম শতকের কাছাকাছি।
প্রশ্ন: ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল কত?
উত্তর: ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রশ্ন: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল কত?
উত্তর: ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রশ্ন: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উৎস কোন অপভ্রংশ থেকে?
উত্তর: গৌড় অপভ্রংশ থেকে।
প্রশ্ন: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভব কোন অপভ্রংশ থেকে?
উত্তর: পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী অপভ্রংশ থেকে।
প্রশ্ন: অনেকেই কোন ভাষাকে বাংলার জননী মনে করত?
উত্তর: সংস্কৃত।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের বিস্তৃত ইতিহাস রচনা করেন কে?
উত্তর: ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উৎসমূলে যে ভাষার সন্ধান পাওয়া যায়, তার নাম কী?
উত্তর: ইন্দো-ইউরোপীয়।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষা কত বছরের পুরনো?
উত্তর: বাংলা ভাষা প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো।
আরো পড়ুন:
10 Minute School Discount Codes
Leave a Reply