মৌলিক অধিকার কাকে বলে

মৌলিক অধিকার কাকে বলে বা মৌলিক অধিকার বলতে কি বুঝায় ব্যাখ্যা কর?

মৌলিক অধিকার হলো সে সব অধিকার যেগুলি একটি দেশের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত এবং যা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাংবিধানিক নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়। তাছাড়া, মৌলিক অধিকার দেশের সংবিধান লিখিত অবস্থায় থাকে এবং অধিকারসমূহ সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত হয়।

অর্থাৎ সংবিধানে উল্লিখিত অধিকারগুলোই একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারসমূহ নাগরিকের জীবন বিকাশ ও সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য সেই সমস্ত অপরিহার্য শর্তাবলী যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক গৃহীত হয়ে থাকে। যেমন: সম্পত্তি ভোগের অধিকার, স্বাধীনভাবে পথ চলার অধিকার, মতপ্রকাশ, ধর্ম পালন ইত্যাদি মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত।

সাংবিধানিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, “মৌলিক অধিকার বলতে বুঝায়, কোনো মানবাধিকার যখন কোন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা [Constitutional Guarantee] দিয়ে সংরক্ষণ করা হয় তখন সেগুলো মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়।”

আমরা অনেকেই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদিকে মৌলিক অধিকার বলে থাকি কিন্তু এগুলো হচ্ছে জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ, মৌলিক অধিকার নয়।

যদি কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে সে সরাসরি সুপ্রিমকোর্টে মামলা করতে পারবে। অর্থাৎ যদি কোনো কারণে মৌলিক অধিকার থেকে কোনো নাগরিক বঞ্চিত হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করার অধিকার রয়েছে।

মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?

মৌলিক অধিকার হল একটি দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত মৌলিক মানবাধিকার যা সমস্ত নাগরিকের/মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এগুলি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই তৈরি করা হয়। 

Fundamental Rights/ মৌলিক অধিকারগুলি সর্বদা নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয় এবং যা প্রতিটি নাগরিককে তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণ মাত্রায় বিকাশ করতে সহায়তা করতে পারে। দেশের মধ্যে স্বৈরাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করে। ব্যক্তি ও দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য মৌলিক অধিকার খুবই প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ:

  1. আইনের চোখে সমতা (অনুচ্ছেদ -২৭)
  2. ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য (অনুচ্ছেদ = ২৮ (১)
  3. নারী পুরুষের সমঅধিকার (অনুচ্ছেদ = ২৮ (২)
  4. সরকারী নিয়োগ লাভে সমতা (অনুচ্ছেদ = ২৯ (১)
  5. আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার (অনুচ্ছেদ = ৩১)
  6. জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা লাভের অধিকার (অনুচ্ছেদ = ৩২)
  7. গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ (অনুচ্ছেদ = ৩৩)
  8. জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ (অনুচ্ছেদ = ৩৪)
  9. বিচার ও দন্ড সম্পর্কে (অনুচ্ছেদ = ৩৫)
  10. চলাফেরার স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ = ৩৬)
  11. সমাবেশের অধিকার (অনুচ্ছেদ = ৩৭)
  12. সংগঠনের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ = ৩৮)
  13. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ = ৩৯)
  14. পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ = ৪০)
  15. ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ = ৪১)
  16. সম্পত্তির অধিকার (অনুচ্ছেদ = ৪২)
  17. গৃহ ও যোগাযোগ (অনুচ্ছেদ = ৪৩)
  18. মৌলিক অধিকার বলবতকরণ (অনুচ্ছেদ = ৪৪)

আরো জানুন:www.judiciary.org.bd/

আরো পড়ুন: 

সমাজ বলতে কি বুঝায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা কর?

ইঞ্জিন মানে কি এবং ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

x
Share via
Copy link